Tuesday, July 16, 2024

ডেডলাইন

একটা দু'মিনিটের কাজ। কোনও জটিলতা নেই। গোলমাল নেই। ফস করে সেরে ফেললেই হলো। অথচ হচ্ছিল না। "এই দু'মিনিটের কাজ তো। তা'ছাড়া ওই দু'মিনিটের সাবমিশন ডেডলাইন ধারেকাছে নেই, হাতে অঢেল সময়"।

এই মিটিং, সেই প্রেজেন্টেশন, অমুক মেমো, তমুক প্রপোজাল; কাজের মধ্যে রে-রে মেজাজ থাকতে হবে, টার্গেট ফেল হলেই গিলোটিন গোছের জৌলুস থাকতে হবে। তবেই না তৃপ্তি। অতএব সেই এলেবেলে দু'মিনিট দিনের পর দিন আড়ালেই পরে রইল।

কিছুদিন নির্বিবাদে কেটে যাওয়ার পর। আচমকা একদিন মাঝরাতের কাছাকাছি পৌঁছে, বাড়ির বিছানার নিশ্চিন্দিতে সে দু'মিনিটের দায়ের কথা মনে পড়লো। "নাহ্, আর ফেলে রাখলে চলবে না। আগামীকাল অফিস পোঁছেই..."। ডেডলাইনটা কবে যেন? মনের মধ্যে মৃদু সন্দেহ দেখা দিল। মোবাইলে ইনবক্স খুলে যাচাই করলাম, আজ মাঝরাত্তিরের আগে সাবমিশন না করলে দু'মিনিটবাবু ফুড়ুৎ করে উড়ে পালাবেন। ঘড়িতে দেখলাম ০০ঃ০০ঃ০০ হতে আর বড়জোর মিনিট পাঁচেক।

তড়াং করে বিছানা ছেড়ে প্রায় উড়ে পৌঁছে গেলাম পাশের ঘরে রাখা ল্যাপটপের কাছে। কর্পোরেট এক্সেলেন্সের নিয়ম মেনেই দেখলাম ল্যাপটপে চার্জ নেই। চার্জার রয়েছে অন্য ঘরে। দে ছুট। দে ওয়াপস ছুট। হাতে তখন মিনিট চার। এক মিনিট চার্জ না খেয়ে ল্যাপটপ মিউমিউ করবে না।

অবশেষে যখন ল্যাপটপ খুলে সাবমিশন হলো, তখন দেখলাম রাত বারোটা বাজতে সাত সেকেন্ড বাকি। ভেবে গর্ব হলো যে দু'মিনিটের সরল সিধে কাজেও কেমন রক্তারক্তি জৌলুস যোগ করেছি। এই না হলে প্রোডাক্টিভিটি। বাড়ির লোকজন জানলে কী'রকম আহার-নিদ্রা-পাশবালিশআরাম ত্যাগ করে কোম্পানির সমস্ত বোঝা কাঁধে নিয়ে আমার পথচলা। মাঝরাত্তিরেও আমার মুক্তি নেই।

পার্কিনসন্স ল যে কী নির্মম আর কী নির্ভুল।

No comments: