Tuesday, July 16, 2024

স্ক্যান্ড্যাল



এক ভদ্রলোক খাটের ওপর গম্ভীর হয়ে ক্যালকুলেটরে মুখ গুঁজে বসে৷ ভদ্রমহিলা আনমনে ডটপেনের মাথা চিবুচ্ছেন, সামনে রাখা একটা রাইটিং প্যাডের পাতা ফ্যানের হাওয়ায় ফটরফটর করছে। মিনিট দুয়েক খুটুরখুটুর করে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ক্যালকুলেটরটা সরিয়ে রাখলেন ভদ্রলোক; ঘোষণা করলেন:
"কী কুক্ষণেই যে এত ভারিক্কি ইন্স্যুরেন্স করাতে গেছিলাম। এখন প্রিমিয়াম জমা করতে গিয়ে অক্কা পাওয়ার উপক্রম"৷

ভদ্রমহিলার অস্ফুটে ফুট কাটলেন, "কেন যে ছাই দু'জনে এত কম মাইনের চাকরি করি"।

ভদ্রলোক সে বেদনার প্রতি সমর্থন জানালেন, "বটেই তো৷ কোথায় ইয়াব্বড় ব্যবসা সামলাবো, স্টেশনবাজারে প্লাইউডের বড় দোকান হবে৷ তুমি হবে রাশভারী প্রফেসর, মাঝেমধ্যেই হিল্লিদিল্লী গিয়ে টেডটক-ফেডটক দেবে। তা না, দু'জনেরই তস্য পাতি চাকরি। সামান্য ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম জোগাড় করতে ল্যাজেগোবরে"।

"শেম", মাথা নাড়লেন ভদ্রমহিলা। তারপর খানিকক্ষণ মাথা চুলকে জানালানে, "দ্যাখো, আমাদের লাক্সারিগুলো একটু চেক করতে হবে"।

"লাক্সারি"?, ভদ্রলোক এ'বার কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ, "কীসের লাক্সারি? কী লাক্সারি? সমরদার দোকানের রুটি-টিকিয়া? উবারের হিসেব দেখে চোখ কপালে তুলে অটোর লাইনে দাঁড়ানো"?

"ফোকাস সরে গেলে চলবে না, প্রিমিয়ামের টাকার কী হবে"?, ভদ্রমহিলার সুর উদাসীন৷

"কী হবে ইন্স্যুরেন্স দিয়ে"?, ভদ্রলোক এ'বার মরিয়া, "লেট আস বি ব্রেভ। টু হেল উইথ ইনস্যুরেন্স"।

"কয়েকটা লাক্সারি ম্যানেজ দেওয়া যায় কিন্তু জানো", ভদ্রমহিলার চোখে এ'বার সলিউশনের ঝিলিক৷

"প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে পরশুর মধ্যে"!

"প্রতি হপ্তার সবজি তুমি কেনো, আমি মাছ৷ তাই তো"? ভদ্রমহিলার ভুরু সামান্য দুলে উঠলো।

"অসময়ে কী সব বাজে কথা বলছো বলো দেখি, তোমার ফোকাসের কী হলো"।

"শোনোই না। আমাদের কমন ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে তুমি সবজি বাজার সারো, আমি আনি মাছ-মুর্গি, এ'টাই সিস্টেম তো"?

"সে'টাই তো এগ্রিমেন্ট"।

"আদতে একটা বিরাট স্ক্যাম। স্ক্যাম"! ভদ্রমহিলা প্রায় হাততালি দিয়ে উঠলেন।

"স্ক্যাম"? ভদ্রলোক তিতিবিরক্ত।

"কমন ফান্ড থেকে টাকা নিলাম। বললাম এক কিলো কাতলা এনেছি৷ আসলে কত এনেছি? সাড়ে সাতশো গ্রাম। বড়জোর আটশো। আটশো গ্রামের ইলিশ রিপোর্ট করলাম, আদতে ওজন কত? সোয়া সাতশো। মুর্গি হামেশাই সাড়ে সাতশো গ্রাম আনি, কন্সট্যান্ট রিপোর্ট করি এক কিলো আর কমন ফান্ড থেকে এক কিলোর দাম সরাই। অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। হপ্তার পর হপ্তা। মাসের পর মাস। গত দু'বছর ধরে"।

"ওহ মাই গড! স্ক্যান্ডালাস! এ যে এনরন ফেল"! ভদ্রলোক অসাড় বোধ করছিলেন।

"স্ক্যান্ড্যাল তো বটেই৷ দু'বছর আগে যখন পলিসিটা নিলে, দিব্যি বুঝেছিলাম এর প্রিমিয়াম টানা তোমার কম্ম নয়৷ অতএব আমাকেই জালিয়াতি করতে হলো"।

" কিন্তু...কিন্তু..এতে আর কতো জমেছে গো"...ভদ্রলোক তখন উত্তেজনায় কাঁপছেন।

"ওই নিভিয়া ক্রিমের যে ঢাউস কৌটোটা ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে জ্বলজ্বল করছে৷ বোরোলিন প্রেমে যে'টাকে তুমি এদ্দিন হেলাফেলা করে এসেছ, সে'টা খুললে টের পাবে যে আগামী তিনবছর আমাদের ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম নিয়ে চিন্তাটিন্তা করতে হবে না", ভদ্রমহিলা তখন কেল্লাফতে হাসি হেসে বিছিনায় গা এলিয়ে দিয়েছেন৷

ভদ্রলোক তখন সামান্য হতবাক, প্রচণ্ড বিব্রত। ভদ্রমহিলার পাশ ঘেঁষে এসে বসলেন৷ লালচে নেলপালিশ রাঙানো একটা আঙুল নিজের আঙুলে জড়িয়ে বললেন, "খুব লজ্জা করছে বলতে, তাও বলি৷ সবজি ফান্ড অল্পস্বল্প আমিও তছরুপ করেছি৷ তবে সে' কেসটা গোটাটাই ক্রিমিনাল। যে'টুকু যা সরিয়েছি, সবই গেছে গোপন সিগারেটে বা..বা...তুমি কখনও বাইরে গেলে...ওল্ড মঙ্কে"।

ভদ্রলোকের গলা জড়িয়ে কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন, "তুমি ভেবেছ তোমার বইয়ের তাকে আড়াল করে রাখা চমনবাহারের কৌটোয় যে কোনোও পানমশলা নেই, তা আমি জানি না"?

No comments: