বাতাসে একটা মিঠে ভাব, চারদিকটা কী অপূর্ব ভাবে শান্ত। মনের মধ্যে আজ একটা অনাবিল স্বস্তি।
অরূপবাবু ঢুলছিলেন ভালো লাগায়, তৃপ্তিতে।
তিব্বতিবাবার থেকে নেওয়া মন্তরটা এদ্দিন পরখ করে দেখা হয়নি। গত বছর প্রভিডেন্ট ফান্ড ভাঙিয়ে কৈলাসযাত্রাটা দিব্যি হয়েছিল, সেখানেই সে বাবাজীর সঙ্গে আলাপ। মাস দেড়েক বাবার পদসেবাতেই কেটেছিল অরূপবাবুর। বৈদ্যবাটির মানুষ, অথচ ভক্তির গুণে তিব্বতি পাহাড়ের গুহার হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাও সয়ে গেছিল অরূপবাবুর। ফেরার মুখে সে বাবাই এ মহামন্ত্র কানে দিয়েছিলেন। তিব্বতি ভাষায় মন্ত্রের নাম যহিদ্যেয্যাবশোস, সে মন্ত্রেই নাকি আদত মুক্তি। মুক্তির প্রসেসটা ঠিক কী'রকম সে'টা খোলসা করেননি বাবা। তাছাড়া আত্মোপলব্ধি ছাড়া মুক্তির মত হাইভোল্টেজ জিনিস আয়ত্ত করা সম্ভবও নয়। মুক্তি তো আর শর্টহ্যান্ডে ডিক্টেশন নেওয়া নয়।
সংসারের হ্যাপা অরূপবাবুকে সামলাতে হয়নি কোনোদিন। তবুও, তিব্বত থেকে ফেরার পর অফিস আর পাড়ার ক্লাব নিয়ে ফের মেতে ওঠায় মুক্তি ব্যাপারটায় সামান্য জল এসে মিশেছিল। তবে তিব্বতি বাবা পইপই করে বলে দিয়েছেন এ জিনিস নিয়ে তাড়াহুড়ো কিছুতেই নয়। মুক্তির ডাক যেদিন অন্তরে এসে টোকা মারবে, সেদিনই সেই মন্ত্রের প্রতি নিজেকে সঁপে দিতে হবে।
আজ সন্ধের দিকে হাঁটতে বেরিয়ে একটু নিরিবিলি এলাকা দেখে বসে পড়েছিলেন। আজকের সূর্যাস্তটা যেন খানিকটা অন্যরকম ঠেকলো; খানিকটা বিষণ্ণ, আর খানিকটা স্বস্তির। টের পেলেন অরূপবাবু; সময় এসেছি। তিব্বতিবাবাকে সতেরোবার পেন্নাম ঠুকে বাহাত্তরবার সে মহামন্ত্র আওড়ালেন। যাবতীয় কোলাহল স্তিমিত হয়ে এলো। একটা অসামান্য তন্দ্রায় ভেসে যাচ্ছিলেন অরূপবাবু। টের পাচ্ছিলেন মুক্তির রঙ পানসে গোলাপি। বুঝতে পারছিলেন আর পিছুটান রইল না।
এ'ভাবেই কেটে গেল ঘণ্টা দুই। অরূপবাবু চোখ মেলে দেখলেন তাঁর চারপাশটা অয়েলপেন্টিংয়ের মত মায়াবী। আড়মোড়া ভেঙে অরূপবাবু বলতে চাইলেন "বাহ্"। অথচ স্পষ্ট শুনলন যে তাঁর মুখ দিয়ে যে শব্দটা বেরোল সে'টা একটা সুস্পষ্ট এবং সুরেলা "মিউ"।
No comments:
Post a Comment