Thursday, November 21, 2024

রেলস্টেশনের অপেক্ষা



দূরপাল্লার ট্রেন ধরার ব্যাপারে এই আমার এক সমস্যা- ঘণ্টা দেড়-দুই আগে রেলস্টেশনে পৌঁছে গিয়ে অস্থির পায়চারি৷ এ'টা এক ধরণের প্যারানয়্যাই বটে৷ যদি স্টেশন যাওয়ার পথে ট্যাক্সি বা অটোর ইঞ্জিন বিগড়ে যায়? যদি অকারণ ট্র্যাফিক জ্যামে আধঘণ্টার পথ মরুতীর্থ হিংলাজে পরিণত হয়? যদি প্ল্যাটফর্ম গোঁসা করে হাফ কিলোমিটার দূরে সরে গিয়ে চুক্কি দেয়? সে কতরকমের দুশ্চিন্তা৷

তার চেয়ে এমন সময় পৌঁছনো ভালো যখন রেলের লাল কালো ডিজিটাল বোর্ডে সে ট্রেনের আসার ঘোষণাও দেখা যাচ্ছে না৷ তার আগে অন্তত একুশবার দেখে মোবাইল ব্রাউসারে দেখে নেওয়া সে ট্রেন কত নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবে, কোচ পোজিশনের হিসেব কী, ইত্যাদি৷ দেখেশোনা হয়ে গেলে এক পরিচিতকে ফোন করে নিতে হবে সে সে সেই স্টেশনের হালহকিকত সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।

- হ্যালো! হ্যাঁ রে, একটা আর্জেন্ট ব্যাপার। অমুক এক্সপ্রেসটা সাধারণত কত নম্বর থেকে ছাড়ে রে?
- দু'নম্বর।
- তুই শ্যিওর?
- জন্মিলে ঘোল খাইতে হবে, শ্যিওর কে কোথা কবে৷ দু'নম্বরই হওয়া উচিৎ৷ তবে চোখ কান খোলা রাখিস ভাই৷

লে হালুয়া, চোখ কান খোলা রাখতেই যদি হয় তবে গায়ে পড়ে ফোন করছি কেন৷ যা হোক, ইন্টারনেট বলছে দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। পরিচিত কণ্ঠ বলছে সম্ভবত দু'নম্বর৷ কুলি বা চায়ের দোকানির কাছ থেকে আর এক প্রস্থ ঝালিয়ে নেওয়া গেল যে দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মেই যেতে হবে৷ এরপর রেলের শিডিউল বোর্ডের সামনে ধীরেসুস্থে অপেক্ষা; শেষ পর্যন্ত দুই নম্বরই থাকবে তো?

ঝাড়া চল্লিশ মিনিট পর বোর্ডে ভেসে উঠবে দু'নম্বর প্ল্যাটপফর্মের আশ্বাস৷ তখন নিজেই নিজেকে বলতে হবে, "যাক বাবা৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম। তবে কিছুই বলা যায় না৷ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চোখকান খোলা রাখতে হবে৷ কখন কী পালটে যায়.."।

কিন্তু এত ভ্যানতারার পরেও যখন টের পেলাম যে ট্রেন আসতে এখনও প্রায় এক ঘণ্টা মিনিট দেরী, তখন মনে হয় রেলের কোনো কর্মীকে ডেকে বলি স্টেশনেও সিকিউরিটি চেকের ব্যবস্থা শুরু করতে আর বই-বাদে-আর-সব-ফাজিল-জিনিসপত্রের ব্যাপক স্টক-সমৃদ্ধ বুকশপ খুলতে। তা'তে যদি খানিকটা সময় কেতাদুরস্ত ভাবে জলে দেওয়া যায়৷


সে উপায় যখন নেই, তখন খাবারদাবারের দোকান জরীপ করে সময় কাটাতে হয়৷ সে'দিক থেকে ভাজাভুজির স্টলের বর্ণে-গন্ধে সুরাট রেলস্টেশনের লাগোয়া বাজার আর সে স্টেশনের দু'নম্বর প্ল্যাটফর্ম হতাশ করেনি। বিকেল আর সন্ধের মাঝামাঝি সময়, এ সময় প্রায় বেশির ভাগ দোকানেই তেলেভাজার নতুন লট কড়াইয়ে পড়ছে৷ ধোকলা-টোকলা আছে বটে, তবে এ'অঞ্চলে অন্তত দেখলাম হট কচুরিজের মত বিক্রি হচ্ছে হট কচুরিজ এবং হট শিঙাড়াজ (সামোসাজ বলা উচিৎ বোধ হয়)। এ'ছাড়া রয়েছে বড়াপাও পকোড়া গোছের জিনিসপত্র৷ ভাজাভুজির মনোরম গন্ধে ভেসে ভেসে দিব্যি কেটে গেলো মিনিট চল্লিশ৷ ট্রেন এ'বার আসবে৷ দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মের আশ্বাস টিকে আছে কিনা সে'টা এইবেলা আরেকবার যাচাই করে নেওয়া দরকার৷

No comments: