বেড়লটা ইশারায় ডাকলো বলেই সমরবাবু সাইকেল দাঁড়িয়ে করিয়ে ফুটপাথ ধরে এগিয়ে গেলেন। ছিমছাম একটা কফিশপ, সেটার দরজার বাইরে সাদা রঙের বেড়ালটা বসেছিল। এর আগে কোনোদিনও বেড়ালের ইশারার মুখোমুখি হননি সমরবাবু। অতএব সামান্য নার্ভাস বোধ করছিলেন।
বেড়ালকে তো আর "আমায় ডাকছিলেন কি" মার্কা প্রশ্ন করা যায় না। তাই সামনে গিয়ে সামান্য ঝুঁকে ভুরু নাচাতে হলো। কী আশ্চর্য, ল্যাজের ইশারায় সে বেড়ালটা সমরবাবুকে কফিশপের ভিতরে যেতে বললে। এ'সব দামী কফি সমরবাবুর ধাতে সয় না, কিন্তু বেড়ালের এহেন ইন্সট্রাকশন উড়িয়ে দিতে মন সরল না। কফিশপের দরজা খুলে পিছন দিকে তাকিয়ে বেড়ালটার চোখের সামনে তর্জনী ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলেন যে সে কফিশপে ঢুকতে আগ্রহী কিনা। কিন্তু বেড়ালটা ততক্ষণে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
কফিশপে তেমন ভিড় নেই, কোণের একটা টেবিল দেখে বসলেন সমরবাবু। সবচেয়ে সস্তা কফির অর্ডার দিলেন, খিদে ছিল পেটে কিন্তু এখানে এত দাম দিয়ে কিছু নেওয়ার মানে হয় না। শৌখিন কফি শৌখিনতর কাপে এলো, খয়েরি কফির ওপর সাদা ফেনায় একটা হার্ট সাইন আঁকা। বেশ জমকালো ব্যাপার আর কী। তবে বেড়ালের ইশারা ব্যাপারটা দামী কফির চেয়েও জব্বর ব্যাপার, এই ভেবে কফিতে চুমুক দিলেন তিনি।
কফিটা তড়িঘড়িই শেষ করলেন সমরবাবু। বেড়ালটিকে আর একবার দেখা দরকার, ফের যদি ইশারায় কিছু বলে। বিল মিটিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে যখন কফিশপের দরজা খুললেন বেড়ালটা তখন দোকানের বাইরে রাখা চেয়ারের ওপর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে। সাইকেলের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও থমকালেন সমরবাবু। স্পষ্ট মনে আছে বেড়ালটার ল্যাজ বাদে গোটা গা ধবধবে সাদা ছিল। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে পিঠের দিকে একটা পেল্লায় খয়েরী রঙের গোল ছোপ, আর তার ওপরে সাদা শৌখিন একটা হার্ট চিহ্ন।
আর তখুনি জিভে বিশ্রী কিছু একটা ঠেকলো। জিভে হাত দিয়ে দেখতেই দিতেই সে'টা আঙুলের ডগায় উঠে এলো। সে'টা চোখের কাছে আনতেই সমরবাবু বুঝলেন যে বিশ্রী জিনিসটা আদতে একগোছা সাদা লোম।
No comments:
Post a Comment