- বিড়িটার দিকে নজর দিচ্ছেন?
- তা নয়তো কী, এ'ভাবে এই পাবলিক প্লেসে..বড্ড আনহাইজেনিক।
- যাক গে, আপনার লাংস আপনার হ্যাপা। আমার বয়ে গেছে।
- এই এলেন?
- এই মাত্তর। এ'বারে বলুন দেখি অর্জুনবাবু, এ অসময়ে কী জন্য তলব করেছেন।
- অসময় আর কোথায়!
- অসময় নয়? এখনও ফটফটে আলো চাদ্দিকে। সন্ধে হতে মিনিমাম দেড় ঘণ্টা দেরী। এ সময়টা আমাদের জন্য আইডিয়াল নয়।
- ভূতেরা অন্ধকারে কম্ফর্টেবল এই বেসলেস ধারণা মানুষের আছে। আপনি নিজে ভূত হয়ে এ'সব বাজে থিওরি প্রোপাগেট করছেন?
- আপনি মাঝেমধ্যে বড্ড ধমক দিয়ে কথা বলেন অর্জুনবাবু। ভাল্লাগে না।
- সরি সরি। এ লাইনে আসার আগে স্কুলমাস্টার ছিলাম তো৷ তাই মাঝেমধ্যে ওই চড়া মেজাজটা বেরিয়ে আসে।
- অন্ধকারে ভূত বেরোবে, এই ভাবনার মধ্যে আর কিছু না থাক একটা আলগা রোম্যান্স আছে। অকারণ যুক্তি আর লজিক ফলিয়ে রোমান্স ঘেঁটে দেওয়ার মানে হয় না। মাঝরাত্তিরে ঘুরতে বেরোব, অনতিদূরে কোনো ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে বিষণ্ণ পিয়ানোর সুর ভেসে আসবে, একটা কালো বেড়াল ছলাৎ করে পাঁচিলের ওপর থেকে লাফ দেবে। এল ফালি চাঁদ সুট করে মেঘের মধ্যে সেঁধিয়ে যাবে। আর সেই সিচুয়েশনে রাস্তায় কোনো একলা মানুষ বাতাসে আমার শিরশিরে উপস্থিতি টের পাবে। উফ, ভাবতে আমারই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
- আপনার গা নেই অমিয়বাবু৷ কাঁটার প্রশ্নই ওঠে না।
- ধ্যাত্তেরি। ফের বাজে লজিকে রোম্যান্স ঘায়েল। কাজটা কী এ'বারে বলুন দেখি৷ আমার হাতে বাজে সময় কম।
বিড়িটা ফেলে পকেট থেকে একটা মোড়ানো শালপাতা বের করলেন অর্জুনবাবু। তারপর সে মোড়ক খুলতেই বেরিয়ে এলো এক থোকা জুঁইফুল৷ এরপর হুট করে একরাশ ঠাণ্ডা হাওয়ার স্পর্শ টের পেলেন হাতে। সেই শীতলতা শালপাতা বেয়ে জুঁইয়ের থোকায় মিশে গেলো।
অর্জুনবাবু টের পেলেন অমিয় নামের একদলা হাওয়া জুঁইয়ের সুবাসে মিশে গেল। মিনিট দুই পর ভদ্রলোকের মিহি কণ্ঠস্বর ফের অর্জুনবাবুর কানে ভেসে উঠলো।
- অর্জুনবাবু...কী বলে যে আপনাকে..।
- এ আর এমন কী..আপনি আমার বন্ধু অমিয়বাবু।
- চোখে জল চলে এলো মাইরি।
- আপনার চোখ নেই। চোখের জল নেই।
- যাচ্চলে৷ ধ্যাত্তেরি৷ সেই কোল্ড লজিক।
- এই গুমোট শহরে আপনার মত জুঁইয়ের সমঝদার আর ক'টা আছে বলুন৷ কাজেই আপনার কাল্পনিক গায়ের কাঁটা আর কাল্পনিক চোখের জলে মিলেমিশে জ্যান্ত মানুষদের রোমান্সকে যে'কোনো দিন টেক্কা দেবে৷ তাই তো কোয়ালিটি জুঁই দেখলেই আপনাকে ডাক দিতে ইচ্ছে করে অমিয়বাবু..।
- হাড় জ্বালানো লজিক-গাম্বাটামো সত্ত্বেও
আপনি মানুষটা নেহাত এলেবেলে নন অর্জুনবাবু, বুঝলেন!
No comments:
Post a Comment