এই ধরুন একটা বই পড়া শুরু করলেন। খান দশেক পাতা এগোতেই বইটা আপনাকে টেনে ধরলে। সেই টান অবশ্য কলার হিঁচড়ে টানা নয়৷ আপনাকে সে বই ধরে রাখছে স্নেহ-মায়া দিয়ে, বুদ্ধিদীপ্ত স্টাইল দিয়ে, ভালোবাসায় মুগ্ধ করে। হাসিয়ে৷ "ও কিছু নয়, চোখে কিছু পড়েছিল আর কী" মার্কা থমকে যাওয়া দিয়ে৷
আপনার সঙ্গে সে বই সারাক্ষণ ঘুরঘুর করছে। অফিসের ব্যাকপ্যাকে, বালিশের পাশে, খাবার টেবিলের এক কোণে, সোফার কুশনের আড়ালে। সবসময় হয়ত পড়ছেন না, কিন্তু সে বইয়ের মলাটে হাত বুলোচ্ছেন মাঝেমধ্যে, বুকমার্ক হয়ে উঠছে আঙুল। ছ-সাত পাতা আগে ফেলে আসা কোনো ভালো লাগা লাইন বা প্যারাগ্রাফে মাঝেমধ্যেই ফিরে যাচ্ছেন৷ কিছু কিছু পাতা বার বার পড়েও আশ মিটছে না৷ পড়ার গতির তোয়াক্কা করছেন না মোটেও৷ আপনার দিনের প্রতিটা ফ্রেমের মধ্যে বইটার বিভিন্ন টুকরো ছড়িয়ে পড়ছে।
এমন সময়৷ কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে, বন্ধুর বইয়ের শেল্ফ থেকে বা রেলস্টেশনের হুইলার থেকে একটা বই হাতে তুলে নিলেন৷ মলাটের ও'দিকে এগোনোর কথা ছিল না৷ তবে কত কিছুই তো কথার বাইরে যায়৷ দু'পাতা চোখ বুলোনো হলো। ব্লার্বটা পড়ে মাথা নাড়া হলো। প্রচ্ছদটা যে দুরন্ত সে'টাও কাউকে ধাক্কাসহ বলে দিতে হয় না৷ আগ্রহের একটা বিন্দু জমাট বাঁধলো। বইটা সে বন্ধুর থেকে ধার নিলেন অথবা দাম মিটিয়ে ব্যাগস্থ করলেন।
কত বইই তো আসে যায়৷ এই নতুন বইটারও আপাতত ব্যাগের মধ্যেই থাকার কথা৷ ভালোবাসার যে বইটা গত কয়েকদিন ধরে আপনি ধীরেসুস্থে পড়ে চলেছেন, আপাতত ফোকাস এবং যত্ন সে'খানেই থাকার কথা। কিন্তু ওই যে বললাম, কত কিছুই তো কথার বাইরে যায়। এদ্দিন এই ভালোবাসার বইটার সিংহভাগ পড়া হয়েছে নতুন প্রেমে পড়ার কবির স্টাইলে৷ কিন্তু বাকি থাকা সত্তর আশিটা পাতা আচমকা রুদ্ধশ্বাস গতিতে পড়া শুরু হলো; ঠিক যেন দেশে যুদ্ধ এসে পড়েছে, এ'টা শশব্যস্ততার সময়৷ যে'খানে এসে প্রতিটা শব্দের ওপর স্পটলাইট পড়ার কথা, সে'খানে মনে হচ্ছে প্রতি লাফে হাফডজন সিঁড়ি ভেঙে এগিয়ে না গেলে চলবে না৷ মন তখন নতুন বইয়ের কবলে চলে গেছে, আর রক্ষা নেই৷
বই-ঠকানোর ইস্পাত শীতল অনুভূতি কখনও টের পেয়েছেন কি? কখনও?
(ছবি: জেমিনাই)
No comments:
Post a Comment