পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ডের মাথায় প্যারাশুট খোলার কথা ছিল। পঞ্চাশ সেকেন্ড ছাড়িয়ে গেছে; খুললো না। আর খুলবে বলে মনেও হচ্ছে না। আমার প্রাইভেট স্কাইডাইভার কোচ চরণ ব্যাটা আচ্ছে ডোবালে দেখছি। কেন যে খামোখা স্কাই-ডাইভিংয়ের শখ চাপলো। আর কেন যে খামোখা দু'পয়সা বাঁচানোর লোভে ওই ফোর টুয়েন্টি চরণের খপ্পরে পড়লাম; ব্যাটা বলে কিনা বাজারে যা রেট তার চেয়ে অর্ধেক রেটে আমায় প্লেন থেকে ফেলে দেবে। সত্যিই ফেলে দিলো, কিন্তু নরম ভাবে নামানোর ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেলো। দিব্যি ছিলাম ক্লাবে ক্লাবে ব্রিজ খেলে আর মদ গিলে। এই বিটকেল শখ যে কেন মাথায় এলো।
বাষট্টি সেকেন্ড হতে চললো। প্যারাশুট বলে আদৌ কিছু দিয়েছে না তাঁবুর কাপড় পিঠে বেঁধে দিয়েছে কে জানে। কী বেআক্কেলে লোক দেখুন দেখি চরণ। পিওর গাম্বাট অথচ কথাবার্তায় যেন মধু ঝরে পড়ছে। "শরীর ভালো আছে তো স্যার?" "ঝাঁপাতে রেডি তো স্যার?" "ভয় করছে না তো স্যার? আরে আমি তো আছি"। হাতির মাথা আছে, রাস্কেল!
যা বুঝছি আর তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যেই ক্র্যাশ করব, তারপর সবকিছু চুরমার। বেরোনোর আগে মুখে একটু মশ্চারাইজার মেখে বেরোতে পারতাম; ডেডবডি ভাঙাচোরা হলেও চলে; ফাটা ঠোঁট-গাল ব্যাপারটা কেমন বিশ্রী লাগে যেন।
যা হোক, সে'সব ভেবে আর কী হবে৷ শিউলিই যখন আর জীবনে রইল না, এই ভালো। অবশ্য আমাদের ডিভোর্সটা এখনও হয়নি৷ এই ছুটি কাটিয়ে ফিরে, পুজোর পর ডিভোর্সের দরখাস্তে সই করব তেমনটাই প্ল্যান ছিল৷ মাঝেমধ্যে রাগের মাথায় হাত-টাত তুলে ফেলেছি বলে কি প্রেম-মোহব্বতটা মিথ্যে হয়ে গেল? শিউলি খামোখাই জেদ ধরে বসলো৷
আর বড়জোর আঠেরো সেকেন্ড বাকি৷ অথচ আমার এত সম্পত্তি-টাকাপয়সা ছেড়ে মন পড়ে রয়েছে শিউলিতে৷ ইজ দিস নট ট্রু লাভ? সে শুধু মারধোরই দেখলে? স্নেহ, মায়া আর প্রেমটা দেখলে না? কেউ ভালোবাসে কবিতা লিখে, কেউ গান বেঁধে৷ আমার স্টাইলটা একটু না হয় অন্যরকম৷ এই যে বিয়ের পর শিউলির চাকরিটা ছাড়িয়ে দিলাম, সে'টাও তো ভালোবেসেই৷ আমার এত টাকা, আর আমার বউ কিনা খেটে মরবে? রামোহ্, রামো্হ।
আর দশ সেকেন্ড৷ পড়ে রইল বালিগঞ্জের জোড়া ফ্ল্যাট, বোলপুরের বাগানবাড়ি আর কার্সয়াঙের কটেজ৷ পড়ে রইল ব্যবসাপাতি আর সুদের কারবার৷ কত করে বোঝালাম শিউলিকে, আরে পোস্টঅফিস ক্লার্কের মেয়ের অত দেমাক দেখানো ভালো নয়৷ ডিভোর্স না করলে সে কত ফুর্তিতে থাকতে পারবে৷ তা নয়, ডিভোর্সই চাই৷ শেষ দিকে অবশ্য নরম হতে শুরু করেছিল৷ হঠাৎ বলেও ফেলেছিল পুজোর আগে ডিভোর্স দেবে না, স্যুইট গার্ল সে'দিক দিয়ে৷
যা হোক..এ'বার তবে...এই এক মিনিট..এই থামাও..এই কেলো করেছে..ডিভোর্স অ্যাপ্লাই করিনি যে এখনও..আমার সব টাকাপয়সা তা'হলে ওই বজ্জাত মেয়েটা পাবে? এ বাবা! হায় হায় হায়!
দু'সেকেন্ড পরেই ইম্প্যাক্ট!
কী সর্বনাশ!
এই এক মিনিট!
এক মিনিট!
এ সেরেছে!
শিউলি হারামজাদির উকিলের নাম উমা দত্ত না?
আর ওর লেটার হেডে ইউ সি দত্ত লেখা থাকত না?
উমা সি দত্ত?
উমা চরণ দত্ত?
চরণ?
হে ভগবা...!
(ছবি: জেমিনাই)
No comments:
Post a Comment