Sunday, March 16, 2025

আতর



- এই যে স্যার...নমস্কার! বিকেলবেলা বাসস্টপে খামোখা একা দাঁড়িয়ে না থেকে এই প্রডাক্টটা..।
- চাই না, চাই না। সরে যান।
- প্লীজ। কিউরিওসিটিকে অকালে অক্কা পেতে দেবেন না। চারপাশে কত কী চমৎকার ঘটছে অনবরত..।
- দেখে তো মন হচ্ছে টাইগার বাম বিক্রি করছেন। না কি বাতের তেল?
- খামোখা আন্দাজে ঢিল মারলেও ঠকতে হবে স্যার। বাস আসতে এখনও মিনিমাম পনেরো মিনিট..। সময়টার সদ্ব্যবহার করুন।
- বলুন। কোন চমৎকার জিনিস আপনি বেচছেন।
- আতর।
- আতর? নাহ্। আপনার ম্যাজিক ফেল পড়লো। আমার বেয়াল্লিশ হলো গতমাসে। আজকাল বোরোলিন আর সর্ষের তেলে ছাড়া কোনো গন্ধ এ পোড়া দেহে সয় না।
- আমার প্রডাক্ট কি অতই এলেবেলে স্যার? এ আতরে গন্ধ নেই।
- গন্ধহীন আতর? ইয়ার্কি পেয়েছেন?
- এ আতরে বন্ধুর গন্ধ আছে। আপনজনের সুবাস।
- কীসের গন্ধ? কার সুবাস?
- কবজিতে দু'ফোঁটা ফেলুন। দু'বার শ্বাস নিন। ব্যাস। দেখবেন একাকিত্ব ঘুচে যাচ্ছে।
- আপনার মধ্যে বেশ একটা চালিয়াত গোছের ইয়ে আছে কিন্তু। প্লীজ, নিন্দে ভাববেন না।
- কিছুমাত্র মনে করিনি। তা, নেবেন?
- বাস আসা না পর্যন্ত আপনি এমন ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ঘ্যানঘ্যান করবেন?
- আপনি ভাবছেন আমি প্রডাক্ট পুশ করছি। অথচ আমি দেবদূতের মত আপনার জীবন পাল্টে দিতে চেয়ে ঝুলোঝুলি করছি।
- জীবন না পাল্টে ছাড়বেন না?
- এক শিশি সতেরো টাকা। জোড়ায় তিরিশ।
- একটাই দিন।
- খুচরো ম্যানেজ করতে পারবেন? তিরিশই ভালো না? তা'ছাড়া আমায় রোজ পাচ্ছেন কই।
- দিন দু'টো। আর তারপর প্লীজ, আমায় আর ঘাটাবেন না।

***

- অ্যাই ব্যাটাচ্ছেল ফুলু!
- বা...বা...বাবা তুমি...।
- বাপের কণ্ঠস্বর চিনতে পারছিস না রে ইডিয়ট?
- আঁ...আঁ...।
- পেট কামড়াচ্ছে নাকি?
- আমি কি স্বপ্ন দেখছি বাবা?
- মোটেও না। রীতিমতো বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চিতে বসে একা ঢুলছিস, আর আমি এই তোর পাশে এসে বসলাম।
- এদ্দিন পর...না মানে...।
- ভূতই বটে। কিন্তু তাও তোর বাপ তো। ন্যাকামি করিস না। তাছাড়া কে চায় এমনভাবে দেখা দিতে। নেহাত তুই কাক্সক ছড়ালি গায়ে। বাধ্য হয়ে আসতে হলো।
- কাক্সকটা কী বাবা?
- ওহ। তুই তো জানিস না। ও জিনিস গায়ে ঢাললে আপন মানুষের আত্মারা আশেপাশে এসে বসে। কখনও স্বপ্ন দেয়। কখনও সোজাসুজি গল্প ফেঁদে বসে। নিধু আর ওর মত আরও অনেকে ঘোরাঘুরি করে আর মানুষের গায়ে ওই কাক্সক আতর ছড়িয়ে বেড়ায়। সে সুযোগে আমরা একটু নিজেদের মানুষগুলোর কাছে আসি কয়েক মিনিটের জন্য। মানুষ এত একা রে ফুলু। আমরা মাঝমধ্যে নেমে না এলে যে তোরা পাগল হয়ে যাবি।
- আচ্ছা, ওই যে আতরবেচনেওলা? তাঁর নাম নিধু? সেও ভূত?
- ও মা। না না।
- সে মানুষ?
- না রে ফুলু। নিধু মানুষ বা ভূত হতে যাবে কেন। সে হলো খুয়ত। খুয়তদের কাজ এসব জিনিস আড়ালে আবডালে মানুষের গায়ে ছড়ানো। কিন্তু নিধু রাস্কে্লের আজকাল ব্যবসায় মতি হয়েছে। রেলস্টেশন বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে ঘুরে আজকাল সে আতর বিক্রি করে লোক ঠকাচ্ছে।
- খু...খুয়ত? সে'টা কী?
- উম। কী করে বোঝাই। খুয়তরা ভূতেদের রোবট ধরে নে।
- মাথা ঘুরছে বাবা।
- চোখ ছলছল করছে কেন?
- বড্ড একা বাবা। এই যে তুমি এলে, এই যে আজেবাজে প্রশ্ন করে তোমায় বিরক্ত করতে পারছি...। আচ্ছা বাবা, তুমি কেমন আছ?
- তুই আচমকা হেসে উঠলি। তাই দিব্যি আছি।
- কতক্ষণ আছো?
- যতক্ষণ তুই বাসস্ট্যান্ডে , ততক্ষণ।
- তা'হল আজ দুটো বাস ছেড়েই দিই। কী বলো।
- দ্যাখ ফুলু, বিকেলের কী জেল্লা।
- এক্কেরে বিউটিফুল। তাই না বাবা?

No comments: