আড্ডার শেষ প্রান্তে ছানার পায়েস এক চামচ মুখে দিয়ে অভয়দা ঘোষণা করলেন, "শুগার ব্যাপারটাই পয়জন"।
বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ত হলে। এমন নির্মম সত্যকে অগ্রাহ্য করা চলে না।
"এই যে আজ দু'চার চামচ ছানার পায়েস খাচ্ছি, এ'টা মেকআপ করতে অন্তত সাতদিন এক্সট্রা মাইল চারেক হাঁটতে হবে"।
কী আশ্চর্য, অভয়দা এই নিয়ে তিন নম্বর ছানার পায়েসের বাটি সাবাড় করতে চলেছেন। তবে সে'টা ধরিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ভদ্রলোক 'মাই ডিয়ার' হলেও আমার অফিসের বস।
"চেষ্টা করবি চিনি ব্যাপারটাকে জাস্ট ছেড়ে দেওয়ার।ব্ল্যাক কফি, গ্রীন টী ইজ ইওর ফ্রেন্ড। আর হ্যাঁ, প্যাকেজড স্ন্যাক্স দেখলেই ল্যাজ গুটিয়ে পালাতে হবে। তা'হলেই দেখবি অটোমেটিকালি আয়ুতে অন্তত পনেরো বছর যোগ হয়ে যাবে"।
চমৎকৃত হতে হলো। অভয়দার সুতির পাঞ্জাবির বুকপকেটে এখনও এককুচি চিপ্স লেগে আছে। খানিকক্ষণ আগেই একবাটি চিপ্স আর একবাটি কুড়কুড়ে সামনের টেবিলে রেখেছিলাম। আর তার পাশে একটা ছোট থালায় ঘরে বানানো রোস্টেড মাখানা। অভয়দা নির্বিবাদে চিপ্স আর কুড়কুড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন, মাখানাদের গায়ে আঁচড়ও পড়েনি।
"সবচেয়ে ডেঞ্জারাস জিনিস কি জানিস"?
"কী অভয়দা"?
"কোল্ডড্রিঙ্কস। কার্বোনেটেড পটাশিয়াম সায়নাইড মাইরি। এক এক চুমুকে যা ক্যালরি আছে রে ভাই, ভেবেই গা কেঁপে ওঠে"। এই বলে একটা জোরদার ঢেঁকুর তুললেন অভয়দা। থামস আপের।
"তাই তো", বাধ্য ছাত্রের মত স্বীকার করে নিলাম। অভয়দা আচমকা সামনে রাখা কাচের গেলাসটার দিকে তাকালেন। সামান্য কেশে যোগ করলেন, "ভাবিস না আমি রোজ রোজ কোল্ডড্রিঙ্কস কনজিউম করি। আসলে একটা নতুন ট্রেডমিলে ইনভেস্ট করেছি কিনা। স্টেট অফ দ্য আর্ট এক্কেবারে। হাফ গেলাস থামসাপ আধঘণ্টার ভিগরাস ট্রেডমিল রানে সাফ করে দেব"।
"বটেই তো", অভয়দাকে অভয় দেওয়া ছাড়া গতি ছিল না, "বলছি ডিনারটা সেরেই যাবে নাকি? তা'হলে অর্ডার দিই কিছু..."।
"তা দিতে পারিস। তবে আমি তো আর তোদের মত ইয়াং টার্ক নই, সাদামাটা কিছু বলিস। নো ময়দা, মিনিমাম তেল। রিচ কিছু আর ম্যানেজ করতে পারি না। বয়সটা দেখতে হবে তো"।
"নো ময়দা। তেল কম। উম....চিকেন স্যালাড গোছের কিছু.."।
"সরি রে। সন্ধের পর আমি আবার স্যালাড খাই না। ডিসিপ্লিনের ব্যাপার। সিম্পল দেখে বিরিয়ানি আনিয়ে নে। আর তার পাশে হেভি কিছু না, জাস্ট কাবাব-টাবাব আনালেই হবে। ওকে"?
ফের মাথা নাড়লাম। "ওকে"।
No comments:
Post a Comment