- এই যে তুই সকাল থেকে এত নিশ্চিন্ত হয়ে বই পড়ছিস..।
- আর এই যে তুই ক্রমাগত বাগড়া দিচ্ছিস তুলি..।
- এত ম্যানেজ করতে আমার আর ভালো লাগে না।
- বিনু, গোটা রোব্বার বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকলে তো প্রব্লেমগুলো নিজে থেকে সলভ হবে না।
- সে কী। আমার তো ধারণা এই বই পড়াটাই সলিউশন।
- আজ মাসের দু'তারিখ। তোর আর আমার অ্যাকাউন্ট মিলে পড়ে আছে সতেরোশো টাকা। আর সে'সব নিয়ে আলোচনা না করে গল্পের বই পড়াটা সলিউশন?
- মাংসের দোকানে লাইন দেওয়ার নেই। সিনেমার টিকিট কাটার নেই। ঘুরতে যাওয়ার নেই। অখণ্ড অবসর; অতএব বই পড়াটা এস্কেপ রুট নয়, সলিউশন।
- আমি ও'রকম চোখ বুজে ভবাপাগলা হয়ে থাকতে পারি না।
- পারলে আরো দু'টো টিউশনি নে।
- আর তুই? তুই কি করবি? সংসারটা আমার একার?
- আমি বই কেনা ছেড়ে দেব। তা'তে আমার নেট কন্ট্রিবিউশান তোর দু'টো টিউশনির চেয়ে বেশি হবে।
- ছুটির দিনে পড়বি কি?
- পুরোনো বই। রিপীট টেলিকাস্ট।
- বিনু। সিরিয়াস কবে হবি।
- আরে তুই বড্ড প্যানপেনে। আগামী হপ্তায় দু'টো কমিশন ব্যাঙ্কে ঢুকবে। মিনিমাম আট হাজার।
- মাসকাবারি বাকি।
- তোর ওই লেকটাউনের টিউশনির টাকাটা পাওয়া বাকি আছে না?
- দিয়ে দেবে। আজকালের মধ্যে। ও'দিকে স্কুটারের ইএমআইটাও কাটবে পরের হপ্তাহে। ওরে বাবা রে...কত খরচ রে আমাদের..। এখনও গোটা মাস পড়ে..।
- অন দ্য ব্রাইটার সাইড তুলি..এ মাসে আঠাশ দিন। দু'দিন আগেই পরের স্যালারি ঢুকবে। ভেবেই মনে হচ্ছে সন্ধেবেলা ফিশফ্রাই খাই।
- ফোন আর ওয়াইফাইয়ের রিচার্জ বাকি।
- তুলি।
- ভাল্লাগেনাছাই। আরো কত খরচ বাকি..। আর এ'টা শুধু এ'মাসে নয়। এক টানা, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এক মাসের ধাক্কা কোনোরকমের সামলে পরের মাসের টেনশনে ঢোকা...ভাল্লাগেনা বিনু..।
- তুলি..।
- কখনও জিরোতে পারি না যেন। ধুর।
- তুলি!
- কী?
- এ'দিকে আয়।
- হ্যাট। ন্যাকা।
- ইধর আও।
- কী ব্যাপার?
- আয় না।
- বল্।
- মাসের পয়লায় আমরা বাড়িভাড়া দিই। বছরের শুরুতেই মেডিকেল ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম ভরি। গরমকালে এসি চালাই। গত তিন বছরে একবার পাহাড় একবার সমুদ্র হয়েছে। আমরা খুব বড়লোক রে তুলি।
- তা আমি জানি। সে জানায় টেনশন কমে না।
- এটা একটা ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট প্রব্লেম। একটু দ্যাখনাই গলা শুকোনো।
- ভাল্লাগেনা বিনু। একটু গা ছেড়ে খরচ করতে ইচ্ছে করে মাঝেমধ্যে। খুব বড়লোকি না, ওই একটু দুশ্চিন্তা না করে রেস্টুরেন্টে ঢোকা একদু'বার। ও'তেই হবে।
- নির্মলদার দোকানের রুটি তরকা যে কেন তোর এলিট রেস্টুরেন্ট মেনুতে পড়ে না কে জানে।
- থাম তুই। অসহ্য ডেঁপো।
- ডেঁপো হ্যাস এক্সেপশনাল চুলেবিলি স্কিলস।
- তা হ্যাস।
- তুলি, একটা মাইনর আপডেট।
- কী?
- নীলুর দোকান থেকে ফোন এসেছিল। আমাদের ফ্রিজটা আর রিপেয়ার হবে না।
- সে কী! আমায় এখন বলছিস? এই বাজারে নতুন ফ্রিজ পাবো কই!
- সেই এমার্জেন্সি ফান্ড!
- না। মরে গেলেও না!
- ও'টা এখন সত্তর হাজার আছে। ও'খান থেকে বড়জোর কুড়ি বেরোবে।
- না! খবরদার!
- উপায় কী? ফ্রিজ ছাড়া থাকলে ডেলি খরচ বাড়বে।
- বিনু তুই একটা আস্ত বজ্জাত।
- আমার ওপর চটে কী হবে।
- বিনু, ও'টাকে তুই এমার্জেন্সি ফান্ড বলিস কেন? ও'টা আমাদের বিয়ের ফান্ড! ও'টায় দু'লাখ জমলে আমাদের জমজমাট বিয়ে করার কথা।
- একদম! ও'টায় দু'লাখ হলেই ছাদনাতলা! স্ট্রেট!
- পাঁচবছর সংসার হয়ে গেল বিনু অথচ এখনও বিয়ের ফান্ড একলাখও পেরোলো না। সবার চোখে লিভটুগেদার কাপল হয়েই রয়ে গেলাম।
- পাতি সইসাবুদে বিয়ে তোর মনে ধরে না। বিয়ে নিয়ে লাটসাহেবি করলে এই হবে!
- বিয়ে পাতি হবে কেন রে রাস্কেল?
- নবাব নবাবী করে তুলি তুলিগিরি, মিছিমিছি গাল খায় বিনুভিখিরি।
No comments:
Post a Comment