ড্রোনটা এসে নামলো বিন্দিপুর গ্রামের বিমলাবালা দেবী গার্লস হাইস্কুলের মাঠে। রবিবারের কাঁচা ভোর, তাই স্কুলবাড়ি সুনসান। অবশ্য অজস্র মানুষজন থাকলেও সে ড্রোনের নেমে আসা কেউ টের পেত না। সে ড্রোন দেখতে অবিকল একফোঁটা কুয়াশার মত। আরও সহজ করে বললে সে ড্রোনকে প্রায় দেখাই যায় না।
ড্রোনটা নামা মাত্রই স্কুলের দারোয়ান বিনোদবিহারীর ছোট্ট এক কামরার ঘরের ভিতর দু'টো পিং শব্দ হলো। পিং বললাম বটে, টুং-ও বলা যেত। ওই মৃদু যান্ত্রিক একটা ব্যাপার। খুব কান পেতে না শুনলে টের পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বৃদ্ধ বিনোদবিহারীর ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা। তিনি জানেন ই-সেভেন-থ্রি-রেভ নেমেছে। তিনি জানেন এ'বারে কী হবে। এফএম রেডিওয় বেজে চলা মহম্মদ রফির গান থেমে গেলো, এরপর পনেরো-কুড়ি সেকেন্ড শুধু স্ট্যাটিকের শব্দ। বিনোদবিহারী নিজের ঘুপচি ঘরের ছোট্ট জানালার পাল্লাটা টেনে বন্ধ করে দিলেন।
স্ট্যাটিক থেমে গেলো। খানিকক্ষণ উসখুস করে বিনোদবিহারী নিজের খয়েরি হাফশার্টের বুকপকেট থেকে একটা খৈনির ডিবে বের করলেন। খৈনির ডিবেটা এক প্যাঁচে মাঝ-বরাবর খুলে ফেললেন বিনোদবিহারী। ডিবের মধ্যের ছোট্ট স্ক্রিনটার ওপর তরতরিয়ে সবুজ রঙের কোড আসা যাওয়া করছিল। আর দেরী নয়। ডিবের অন্যদিকে আলতো চাপ দিয়ে ড্রোনের ট্রান্সমিটারকে 'অ্যাফার্মেটিভ' জানালেন বিনোদবিহারী।
আড়াই সেকেন্ড মত লাগলো গোটা ব্যাপারটা ঘটে যেতে। আপাতত ক্লাসে মেয়ে পড়ানো, খেলারমাঠে হুটোপুটি, স্টাফরুমের গোলমাল ক'দিনের জন্য বন্ধ। অবশ্য "ক'দিন" ব্যাপারটা বিনোদবিহারীর মনে হয়। অঙ্কের মাস্টার অমিয়বাবু হলে ভারিক্কি গলায় বলতেন "এই যে তোমার দারোয়ানগিরি, আমার মাস্টারি আর এই যে চাদ্দিকে এত মানুষজন, পলিটিক্স গানবাজনা, হইহুল্লোড়..এতটা আসতে কদ্দিন সময় লেগেছে জানো বাবা বিনোদবিহারী? থার্টিন পয়েন্ট এইট বিলিয়ন ইয়ার্স। তার আগে ছিল প্রবল এক কাঁচকলা।বিলিয়নের কন্সেপ্ট বোঝো"?
বিনোদবিহারী ফ্যালফ্যালে চোখে মাথা নাড়তেন। তৃপ্তির হাসি হাসতেন অমিয়বাবু। সে ধরণের হাসি আবার দেখতে হলে এ'বার বেশ কয়েকদিনের অপেক্ষা, অমিয়বাবুর ভাষায় থার্টিন পয়েন্ট এইট বিলিয়ন ইয়ার্স। এই বিলিয়ন ইয়ার্স ব্যাপারটা বিনোদবিহারীর আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারলে না। অবশ্য বিনোদবিহারী এ'ও বেশ জানেন যে অমিয়মাস্টারের 'প্রবল কাঁচকলার' কন্সেপ্টে মারাত্মক খামতি আছে।
No comments:
Post a Comment