- জানলাটা খুলে দিই?
- নার্স, হাতে আর কয়েকটাদিন মাত্র। ভিটামিন ডি দিয়ে করবটা কী। তার চেয়ে বরং টিভিটা অন করুন। ভালো সিনেমাটিনেমা কিছু দেখা যাক..।
- বাইরেটা দেখতে ইচ্ছে করছে না?
- জানালার বাইরে দু'টো নিম গাছ, একট কদমগাছের অর্ধেক দেখা যায়। বাকি সবই হাইরাইজ। মরে যাচ্ছি বলে জোর করে রোম্যান্টিক মেজাজ তৈরি করার কোনো মানে হয় না।
- সরি। আমি টিভি চালিয়ে দিচ্ছি।
- ডাক্তার বর্মন আমার রিকুয়েস্টটার ব্যাপারে কিছু বলেছেন?
- মাংসভাত পারমিট করবেন বলে তো মনে হয় না।
- ফুল।
- ও'ভাবে বলবেন না। বর্মন স্যারের মত ডাক্তার..।
- সরি, ওকে আমার ফুল বলা উচিৎ হয়নি।
- ইট ইজ ওকে।
- ব্লাডিফুল।
- কোন চ্যানেল দেখবেন?
- নার্স, আপনার খারাপ লাগলো? ডাক্তার বর্মনকে দু'টো কড়া কথা বলেছি বলে?
- না না..।
- করেক্ট। মনে রাখবেন আমি মারা যাচ্ছি। কয়েকদিনের মধ্যে। সিম্প্যাথি অলিম্পিকে টীম হুইলচেয়ার বা টীম ব্রেইলের আগে টীম শ্মশানকে এগিয়ে রাখাটা আপনাদের কর্তব্য।
- এ'ভাবে যে সবার সঙ্গে গা জ্বালানো সু্রে কথা বলছেন, তা'তে মনে মনে শান্তি পাচ্ছেন?
- বানিয়ে মিথ্যে বলার চার রইল না। অনেকটা নিশ্চিন্দি বোধ করছি।
- কোন চ্যানেল চালিয়ে দি বলুন তো? ক্রিকেট?
- টিট্যুয়েন্টি হলে ফাইন। লম্বা ফর্ম্যাট দেখার সময় নেই। সামান্য তাড়া আছে।
- সিনেমাই হোক।
- হিন্দি। মারপিটের। প্রিটেনশাস উঁহুআহা দেখে গাল চুলকাতে পারবো না।
- এই সিনেমাটা চলবে? নতুন রিলীজ..। প্রচুর অ্যাকশন।
- গুড। এ'বারে আসুন। ঘণ্টা তিনেক আমায় ডিস্টার্ব করবেন না।
- আমি নার্স। আপনার যা সিচুয়েশন আমি আপনার পাশে না থাকলে..।
- প্রচুর ইন্টিমেট সিন আছে এই সিনেমায়। আপনি পাশে থাকলে আমার ইনটেনশন যে কোনদিকে যাবে..।
- আপনাকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা আমার আছে।
- নিজেকে শায়েস্তা করার ক্ষমতা আমার নেই। আপনি দেখতে তেমন মন্দ নন। শেষ পাতে নিজের চরিত্রের এই দিকটা ফলাও করার মানে হয় না। এমার্জেন্সি বেল আছে তো, আপনি আসুন।
- আর ইউ শিওর মিস্টার চ্যাটার্জি?
- নার্স, আপনার প্রফেশনে এই ন্যাকামো ব্যাপারটা খাপ খায়?
- আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
- আপনার কোয়ার্টার তো হসপিটাল কম্পলেক্সেই। খামোখা এ'খানে বসে থাকা কেন। কোয়ার্টারে যান। বিপদআপদ হলে ছুটে আসতে বড়জোর মিনিট পাঁচ।
- আপনি এত খবর জোগাড় করলেন কী ভাবে? আমি তো কখনও..।
- আমার লিভারটা গেছে। মগজ, চোখ-কান বেশ টনটনে।
- আর জিভের ধারটাও।
- প্লীজ, ফ্লার্ট করবেন না। আমি আপনার পিসেমশাইয়ের বয়সী। যদি আপনার তেমন সুন্দরী পিসি থেকে থাকে আর কী।
- ভারি বিটকেল আপনি।
- মনে রাখবেন। আমি মারা যাচ্ছি। আনন্দ সিনেমাটা মনে করে হামেশা চোখটা ছলছলে করে রাখাটা সবার কর্তব্য।
- আর আপনার কাজ সবাইকে বিব্রত করে কথা বলা?
- আপনি ব্লাডিফুল নন। তবে বড্ড বেশি কথা বলেন। এ'বার আসুন। শারুক্কখান এসে পড়েছেন।
- আমি বাইরের বেঞ্চিতেই বসছি..।
- গো ব্যাক টু ইওর কোয়ার্টার..। আপনার জন্য আমার প্রেশার বাড়ছে..।
- আশ্চর্য! বেশ, আমি আসছি। লছমনকে বলে যাচ্ছি..।
- পিন্টুকে আমার হয়ে বার্থডে উইশ করে দেবেন।
- আপনি কী করে আমার ছেলের কথা...আর আজ যে ওর জন্মদিন সে'টাও বা..।
- আমি আপনার মোবাইল কল..ইয়ে..ওভারহিয়ার করি।
- আমি আপনার রুমে কখনও পার্সোনাল ফোন কল নিইনি।
- ইয়ে, চ্যাটফ্যাট পড়ে ফেলেছি হয়তো।
- মিস্টার চ্যাটার্জি!
- ভুলবেন না। সিম্প্যাথি অলিম্পিক। আমি আনন্দ সেহগল।
- আসুন। পিন্টু স্কুল থেকে ফিরে অনেকক্ষণ একা বসে।
- আমি ঘণ্টাখানেকেই ফিরে আসবো।
- আমার হাতে হপ্তাদুই আছে। খামোখা অত তাড়াহুড়ো কেন।
- কেক আনবো?
- ব্লাডিফুল পারমিশন দেবে?
- আমি রিকুয়েস্ট করবো ডাক্তার বর্মনকে..।
- আপনার রিকুয়েস্ট থাকলে বর্মন আমায় শুধু কেক কেন, লুচি বেগুনভাজা নিজের হাতে খাইয়ে দেবে।
- আপনার ইঙ্গিতটা শোভন নয় মিস্টার চ্যাটার্জি..।
- আপনি সিঙ্গল, ব্লাডিফুল সিঙ্গল এবং সৎ।
- আপনি ভীষণ ই্নট্রুসিভ! আর এ'টা রীতিমতো অন্যায়..!
- আসুন এ'বার। সুইমস্যুটে নায়িকা স্ক্রিনে এসে পড়েছেন। খামোখা আপনার সঙ্গে খেজুর করার মানে হয় না। সন্ধের ভিজিটিং আওয়ার্সের পর আমি বর্মনকে আর্ম ট্যুইস্ট করে আপনার কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দেব।
- শাটাপ মিস্টার চ্যাটার্জি!
- নার্সদেবী, পিন্টুকে সে ব্লাডিফুল ভালোবাসে। স্নেহ করে। পিন্টুও তাকে পছন্দই করে।
- হাউ ডু ইউ নো?
- আমি শুধু আপনার মোবাইল চুরি করে পড়ি ভেবেছেন? ব্লাডিফুলের জার্নাল রয়েছে তার মোবাইলে, সে মোবাইলের পাসওয়ার্ড আবার আপনার জন্মদিন আর সে ক্যাবলা ডাক্তারের পকেট থেকে দিনেরবেলা মোবাইল সরালে সে রাত্তিরে গিয়ে টের পায়।
- কেক আনবো, কেমন?
- ব্ল্যাক ফরেস্ট প্লীজ। এইবারে, গেট আউট!
(ছবি: AI)
No comments:
Post a Comment