Sunday, March 16, 2025

অফিসটাইম



কী অদ্ভুত। আজ বাসস্টপ প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। আশেপাশের দোকানপাটগুলোতেও লোকজন কম, কয়েকটা দোকানের আবার শাটার নামানো। কে জানে কেউ বনধ-টনধ ডেকেছে কিনা। সুদীপবাবু অফিস-টাইমের ঝুলোঝুলিতে দিব্যি অভ্যস্ত, তবে মাঝেমধ্যে এমন ফাঁকায় ফাঁকায় অফিস যেতে পারলে মন্দ লাগে না।

পৌনে আটটার এল-সেভেন-বাই-সতেরো বাসটা অবশ্য টাইমেই এলো। আজ বাসও প্রায় ফাঁকা। জনা সাতেক লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। একটা পছন্দসই জানালা বেছে বসে পড়লেন সুদীপবাবু। এপ্রিল মাসের রোদ্দুরও মিষ্টি মনে হলো ভদ্রলোকের। খান-তিনেক স্টপেজ পেরোনোর পরেও বাসের লোকজন তেমন বাড়লো না, শহরটাই আজ যেন ঝিমিয়ে আছে।

মিনিট দশেকের মাথায় কন্ডাক্টর এগিয়ে এলেন। এ রুটে বছর সতেরো যাতায়াত করছেন সুদীপবাবু, প্রায় সব কন্ডাক্টরই তাঁর মুখ-চেনা, মাঝেমধ্যে "ভালো তো?" গোছের হাসির আদানপ্রদানও হয় তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু এই ভদ্রলোককে ঠিক চেনা ঠেকল না। পরিপাটি চেহারা, বয়স ওই সুদীপবাবুরই মত, চল্লিশ পেরিয়েছে নির্ঘাত।

"একটা পলসন স্ট্রিট অফিস মোড়" বলে মানিব্যাগ বের করলেন সুদীপবাবু। কী আশ্চর্য, কন্ডাক্টর মিষ্টি হেসে বললেন, "আপনার আজ টিকিট লাগবে না"। খানিকটা হকচকিয়ে কন্ডাক্টর ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন সুদীপবাবু। অমায়িক মেজাজে কন্ডাক্টর বললেন,

- এ রুটের পুরনো কাস্টোমারদের জন্য আজ স্পেশ্যাল ট্রিপ, ভাড়া লাগবে না!
- মানে?
- মানে, এ রুটের বাস বছর দশেক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও যারা আমাদের সঙ্গে ছাড়েনি, তাঁদের জন্য স্পেশ্যাল হাওয়া-খাওয়া ট্রিপ।
- ইয়ার্কি মারছেন?
- তৌবা তৌবা।
- টিকিটটা দিন।
- এ রুট এখন বন্ধ, বললাম তো সুদীপবাবু। আজ আপনাদের ট্যুর অফ অনার। উপভোগ করুন।

কন্ডাক্টর সরে গেলেন। ফালতু ইয়ার্কি সুদীপবাবুর ঘোর অপছন্দ, তাও আবার সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষের মুখ থেকে। পাত্তা না দেওয়াই ভালো।

বাস পলসন স্ট্রীটে পড়ার পর জানালার বাইরে চেয়ে আরও খানিকটা অবাক হতে হলো সুদীপবাবুকে। রাস্তাটা একই আছে, কিন্তু এলাকার দোকানপাট বাড়ি-ঘরদোরগুলো সব কেমন অন্যরকম। অফিসপাড়ার বাসস্টপ আসতে নেমে পড়লেন তিনি, কন্ডাক্টরকে আর ভাড়া নিয়ে সাধাসাধি করার মানে হয় না। বাসস্টপের পাশেই অমিয়র পান দোকান। সে'খানে দাঁড়িয়ে একটা ফ্লেক ধরিয়ে অফিসের দিকে হেঁটে যাওয়াটা পুরনো অভ্যাস। আজ অমিয়কে দেখে সামান্য অবাক হতে হলো। সে যেন একদিনের মধ্যে অনেকটা বুড়িয়ে গেছে।

- শরীর কেমন অমিয়?
- ওই, যেমন থাকে আর কী।
- একটা ফ্লেক।
- সে কী, আপনি আবার সিগারেট ধরলেন নাকি? কী দরকার বলুন তো এ বয়সে। চ্যুয়িংগগামেই তো বছর কয়েক দিব্বি চললো। ও জিনিস আর ধরবেন না।

সামান্য বিচলিত বোধ করলেন সুদীপবাবু। স্ত্রীকে একটা ফোন করা দরকার, রহমানের এসটিডি বুথটা অমিয়ের পানের দোকান ঘেঁষে। কিন্তু সে'দিকে তাকেতেই টের পেলেন ওখানে রাতারাতি একটা এটিএম গজিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে টের পেলেন তাঁর বুক পকেটে মোবাইল ফোন। আর সবচেয়ে বড় কথা, অমিয়র পানের দোকানের সামনে নিজের মারুতি গাড়িটা বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখাটা ঠিক হচ্ছে না; 'নো পার্কিং' এলাকা; যখন-তখন ট্র্যাফিক পুলিশ চালান ধরিয়ে দিতে পারে।

No comments: